× Warning! Check your Cooke | Total Visitor : 86841

বিশেষ প্রতিবেদন

Published :
12-09-2020
07:02:47am

Total Reader: 459



পদ্মায় মাছ শিকারে নিষিদ্ধ জালের বিকল্প ‘দোহার’


* দোহার মাছ ধরার ফাঁদ যা সনাতন পদ্ধতির একটি
* সনাতন পদ্ধতিগুলোর ব্যবহারে বাড়বে মাছের প্রজনন 

রাজু আহমেদ : দিনাজপুর জেলার বাবুল হোসেন তার দুই সন্তানকে নিয়ে রাজশাহীতে এসেছেন। বাবুল পেশায় একজন দোহার কারিগর। দোহার হলো বাঁশকে চিকন ফালি করে কেটে বিশেষ পদ্ধতিতে দক্ষ হাতে বানানো এক বিশেষ ধরনের খাঁচা। যা মাছ শিকারের ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি মাছ ধরার সনাতন বা আদী কৌশল।

শ্রীরামপুর; রাজশাহী নগরীর পদ্মা নদীর তীর সংলগ্ন একটি এলাকা। যেখানে মূলত জেলে পরিবারের বসবাস। এসব পরিবারের দেয়া তথ্য মতে পদ্মা নদীতে ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ৫০টির বেশি পদের মাছ রয়েছে। পদ্মা নদীর তীর ঘেষে এমন অনেকগুলো এলাকা রয়েছে, যারা মূলত বর্ষা মৌসুমে পদ্মায় সেই মাছ শিকার করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। রাজশাহী জেলার পদ্মা নদী গোদাগাড়ী উপজেলা থেকে শুরু করে নগর ঘেঁষে চারঘাট উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। এর সাথে রয়েছে অনেক কটি শাখা নদীর সংযোগ।

তবে নানা প্রতিবন্ধকতায় পদ্মা নদীতে মাছ ধরা জেলেদের জন্য মুশকিল হয়ে দাড়াচ্ছে। তাদের ভাষায় নদীর নাব্যতা হ্রাসের পাশপাশি নদী দুষণের কারণে মাছ কমে যাচ্ছে। সেই সাথে নতুন উপদ্রব নৌ পুলিশ। জেলেদের অভিযোগ, নৌ পুলিশ নদীতে জাল ফেলতে দিচ্ছে না।

তাইবলে তো আর হাত গুটিয়ে বসে থাকা যায় না। বিকল্প হিসেবে সনাতন পদ্ধতিতে নদীতে মাছ শিকার শুরু করেছে অধিকাংশ জেলে। দোহার দিয়ে মাছ শিকার সেই পদ্ধতিগুলোর একটি। যা এরই মধ্যে জালের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়েছে। মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে মাছ শিকারে ব্যবহৃত দোহারের মতো এমন সনাতন পদ্ধতিগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

আসাযাক বুবুলের কথায়। এবার বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই বাবুল রাজশহীতে অবস্থান করছে। শ্রীরামপুর এলাকার জেলেরা ‘চাঁই দোহার’ বানাতে বাবুল কারিগরকে নিয়ে এসেছেন। বর্ষা শেষ হলেও তার হাতে এই মুহুর্তে প্রায় এক হাজার চাঁই দোহার বানানোর কাজ আছে। চাঁই দোহার অর্থ মাছ ধরার ছোট খাঁচা। ‘কোল দোহার’ বা বড় দোহারগুলো মাছ ধরতে নদীর তীরে পানির নিচে ফাঁদ হিসেবে ডুবায়ে রাখা হয়। আর চাঁই দোহার ব্যবহার করা হয় একটার সাথে আরেকটা বেঁধে মাঝ নদীতে জালের মতো বিছিয়ে বা বেড় দিয়ে মাছ ধরতে।

দোহার কারিগর বাবুল জানান, সচরাচর তার হাতে কাজ থাকে বাংলার মাগ মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত। তবে এবার আশ্বিন মাস চলে এলেও হাতে কাজ আছে প্রচুর। নদীর যৌবন থাকা পর্যন্ত তার হাতে কাজ থাকবে। বাবুলের হাতে এবার গেল বছরের তুলনায় কাজ বেশি। একশটি চাঁই দোহার বানাতে বাবুল পারিশ্রমিক হিসেবে নেন পাঁচ হাজার টাকা। সেই সাথে প্রতি বেলায় খাবার দিতে হয় তাকেসহ তার দুই ছেলেকে, যারা তার কাজে সহযোগী হিসেবে রয়েছে।

রাজশাহীর পদ্মা নদী ও এর অন্যতম সম্পদ মাছ রক্ষায় নদীতে এতদিন কোন নজরদারি ছিলো না। তবে ২০১৯ এর জুন মাস থেকে এই নদীতে কাজ শুরু করেছে নৌপুলিশ। তারা নদীতে অবৈধ পন্থায় মাছ শিকার ও নদী পথের নিরাপত্তায় কাজ করছে। রাজশাহী জেলার নৌপুলিশের ওসি মেহেদী জানান, এরই মধ্যে রাজশাহীর পদ্মায় অভিযান চালিয়ে তারা প্রায় ৫ হাজার মিটারের বেশি নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল উদ্ধার করেছেন এবং তা নিয়ম মেনে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। সরকারি ঘোষণা আসলে, আগামী ৯ অক্টোবর থেকে ২২ দিন নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এসময় তাদের কাযক্রম আরো জোরদার করা হবে।

শ্রীরামপুর এলাকার বাসিন্দা জমসেদ জানান, তারা বহুদিন থেকেই নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। তবে হঠাৎ নদীতে নৌ পুলিশ নামায় তাদেরকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। নৌ পুলিশ বলছে নদীতে জাল ফেলা যাবে না। তবে কোন জাল ব্যবহার করা যাবে তাও উল্লেখ করছে না। তাই তারা বিকল্প হিসেবে দোহারের ব্যবহার বাড়িয়েছে।

নদী বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টদের মতে, মাছেদের প্রজনন বৃদ্ধি করতে সরকার কারেন্ট জালের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। তবে একটি অসাধু চক্র সেই নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ব্যবহার বন্ধ করেনি। তাদের দেখাদেখি অনেক জেলে না বুঝেই এখনো কারেন্ট জাল ব্যবহার করছেন।
কারেন্ট জালের সবচাইতে ক্ষতিকর দিক, এ জালে পোনা মাছসহ বড় বা মাঝারি আকারের ও জাতের কোন মাছই রক্ষা পায় না। মাছ সমূলে নিধন হয়। ফলে মাছেদের বংশবিস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর সাথে নদীর এমন অনেক জীব আছে তাও নষ্ট হচ্ছে। যা কাম্য নয়।

তবে মাছ ধরার সনাতন পদ্ধতিগুলো মাছের বংশ বিস্তারের জন্য অনেক বেশি নিরাপদ। যেমন, মাছ ধরতে দোহার ব্যবহার করা হলে দোহারে কখনই পোনা মাছ আটকাবে না। এমন অনেক পোনা মাছ আছে যা খাবারের জন্যও উপযোগীও না। অর্থাত সেই পোনা মাছগুলো জীবন ফিরে পেয়ে আগামীতে বড় হবার সুযোগ পেলো।

সম্প্রতি রাজশাহীতে নৌ পুলিশের কার্যক্রম শুরুর পর জেলেরা নদীতে জাল ফেলতে ভয় পচ্ছে। মাছ ধরতে তাদের সংগ্রহে থাকা অধিকায়শই কারেন্ট জাল। তবে প্রশাসনের নজরদারির কারণে তারা এখন সেই সনাতন পদ্ধতিতে মাছ ধরার দিকে ঝুকছে। নদীতে দোহারের ব্যবহার বৃদ্ধি যার অন্যতম প্রমাণ। আর মাছ শিকারের জন্য যে সকল সনাতন পদ্ধতি আছে তার ব্যবহার বাড়াতে পারলে পদ্মায় মাছের প্রজনন বৃদ্ধি পাবে।

এসংক্রান্ত আরো সংবাদ : ফিচার




একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনার চার পাশে ঘটে যাওয়া সংবাদ উপযোগী যে কোন ঘটনার ছবি বা ভুক্তভোগী ও সম্পৃক্তদের মোবাইল নম্বর আমাদের পাঠাতে পারেন।

সম্পাদক : রাজু আহমেদ

বার্তাকক্ষ
এসোসিয়েশন ভবন
৬১০০, রাজশাহী, বাংলাদেশ।
newsdailyrajshahi@gmail.com
call@ 01750142903